আজ বৃহস্পতিবার, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

করোনায়ও ভয়ংকর কিশোর গ্যাং

বিশেষ প্রতিবেদক:
করোনার প্রকোপে নারায়ণগঞ্জকে ইতিমধ্যেই ‘রেড জোন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরেও থেমে নেই কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত। সম্প্রতি দিনের আলোতে এক ব্যবসায়ীকে হত্যা ও মাদকের টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে যুবকের পেটে ছুরিকাঘাত করে তার ভুড়ি বের করে ফেলেছে সন্ত্রাসীরা। প্রশাসনের খামখেয়ালীপনাকে পুঁজি করে দিনকে দিন বেড়েই চলেছে কিশোর গ্যাংয়ের বেপরোয়া মনোভাব। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নগরীর সচেতন মহলের লোকজন।
চলতি মাসের ১ এপ্রিল দিনের বেলায় ফতুল্লা থানাধীন দেওভোগ আদর্শনগর এলাকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে শরীফ হোসেন (২৭) নামে এক ব্যবসায়ী খুন হয়। স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, ওইদিন সকাল ১০টায় দোকানের সামনে বেশ কয়েকজনের জটলা দেখে তাদের সেখান থেকে সরে যেতে বললে প্রথমে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে শরীফের পেটে সন্ত্রাসীরা ছুরিকাঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এ সময় এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ফতুল্লা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনার পরদিন খুনের সাথে সংশ্লিষ্ট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এই ঘটনার রেশ না কাটতেই ৪ এপ্রিল দুপুরে ফতুল্লার ইসদাইরে মাদকের টাকা ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে রুবেল নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে প্রতিপক্ষ। আহত রুবেল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছে। রুবেলের স্বজনরা জানায়, পেটে ছুরি দিয়ে আঘাত করার ফলে পেট থেকে ভুরি বের হয়ে গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। সূত্রমতে, মাদক বিক্রির টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে কমল, সাব্বির, পায়েল ও রুবেলের সাথে ঝামেলার সৃষ্টি হয় লালন বাহিনীর। ওইসময় লালনের সাথে তাদের তর্ক-বিতর্ক এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে পরদিন শনিবার লালন, ফরহাদ, নিলয় ও রোমান বাহিনী ইসদাইর পুলপার এলাকায় কমল গ্রুপের রুবেল নামে ওই যুবককে পেয়ে তার পেটে ছুরিকাঘাত করে। এসময় রুবেল মাটিতে লুটিয়ে পরলে তারা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানা গেছে।
এতো উঠান বৈঠক আর সচেতনতা বৃদ্ধির পরেও কেনো কমছে না কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত। এমন প্রশ্ন করে সংবাদচর্চা থেকে ফোন করা হয় ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেনকে। তিনি জানান, কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে প্রথমেই পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবসময়ই এসকল বিষয়ে সক্রিয় এবং তৎপর। শুধু পুলিশকে একা দোষারপ করলেই হবে না। এই ব্যাধি দূর করতে সকলকে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তারপরেও কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং আগামীতে আরও কঠোর হবো।
এদিকে সচেতন মহল মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আরও বেশি বাড়ানো দরকার। তাদের মতে, পাড়া মহল্লায় উঠতি বয়সের যুবকদের আড্ডা বেশ পুরনো বিষয়। সড়কে ডিউটিরত পুলিশের সদস্যরা যদি শুধু মেইন রোডে গাড়ি নিয়ে না ঘুরে প্রতিদিন পাড়া-মহল্লায় টহল দিলে হয়তো কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আড্ডা জমাতে পারতো না। পুলিশের কতিপয় সদস্যরা শুধু খোঁজে কোন জায়গায় মাদক বিক্রেতা থাকেন। তারা তাদের সোর্সকে কাজে লাগিয়ে শুধু মাদক বিক্রেতাদের আটক করে আর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়। এগুলো না করে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালালে কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।